পাসপোর্ট করার নিয়ম: বাংলাদেশে পাসপোর্ট করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা দেশত্যাগের জন্য বাধ্যতামূলক। অনেকেই পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় পড়েন। এই আর্টিকেলে আমরা পাসপোর্ট করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া, ফি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পাসপোর্ট কি এবং কেন প্রয়োজন?
পাসপোর্ট একটি সরকারি ডকুমেন্ট যা একজন ব্যক্তির জাতীয়তা এবং পরিচয় নিশ্চিত করে। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় পাসপোর্টধারী ব্যক্তির পরিচয় এবং জাতীয়তা প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার নিয়ম ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা থাকলে, যেকোনো নাগরিক সহজেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
পাসপোর্টের ধরণ
বাংলাদেশে পাসপোর্ট প্রধানত তিন ধরনের: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট (রেড পাসপোর্ট): কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের জন্য এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
সাধারণ পাসপোর্ট (গ্রিন পাসপোর্ট): সাধারণ নাগরিকদের জন্য এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
অফিসিয়াল পাসপোর্ট (ব্লু পাসপোর্ট): সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
পাসপোর্টের ধরন | রঙ | ব্যাখ্যা |
---|---|---|
সাধারণ পাসপোর্ট (MRTD) | সবুজ | এটি সাধারণ নাগরিকদের জন্য। |
অফিসিয়াল পাসপোর্ট | নীল | সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য। |
কূটনৈতিক পাসপোর্ট | লাল | কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের জন্য। |
পাসপোর্ট করার প্রাথমিক শর্ত
পাসপোর্ট করতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
- বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ থাকতে হবে।
- নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নতুন পাসপোর্ট তৈরির জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রদান করতে হবে: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্মনিবন্ধন সনদ
- সাম্প্রতিক রঙিন ছবি (৩ কপি, পাসপোর্ট সাইজ)
- বিদ্যমান পাসপোর্ট (প্রযোজ্য হলে)
- চারিত্রিক সনদ (প্রয়োজন হলে)
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিভাগীয় ছাড়পত্র
- বিশেষ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথিপত্র (যেমন: নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিট)
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া
পাসপোর্ট করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া দেওয়া হলো: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান (www.passport.gov.bd)।
- নতুন আবেদন ফর্ম পূরণ করুন: নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, পিতামাতার নাম ইত্যাদি সঠিকভাবে দিন।
- প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করুন।
- আবেদন ফি পরিশোধ করুন (বিকাশ, রকেট, নগদ, ব্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে)।
- আবেদন জমা দিন এবং আবেদন নম্বর সংরক্ষণ করুন।
- আবেদন সফলভাবে জমা দেওয়ার পর নির্ধারিত তারিখে বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ ও ছবি) প্রদান করুন।
পাসপোর্ট ফি ও প্রসেসিং সময়
নতুন পাসপোর্ট তৈরি করতে ফি এবং সময় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
পাসপোর্টের ধরণ | ফি (টাকা) | প্রসেসিং সময় |
সাধারণ | ৪,০২৫ | ১৫-৩০ কর্মদিবস |
জরুরি | ৬,৯০০ | ৭-১০ কর্মদিবস |
অতি জরুরি | ১২,৬৫০ | ৩-৫ কর্মদিবস |
পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়া

পাসপোর্ট করার ধাপসমূহ
১. অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ
পাসপোর্ট করার প্রথম ধাপ হল অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করা। নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: https://www.passport.gov.bd
- নতুন আবেদন ফর্ম পূরণ করুন: প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।
- আবেদন ফর্ম জমা দিন: ফর্মটি সাবমিট করুন এবং প্রিন্ট আউট নিন।
২. প্রয়োজনীয় ফি প্রদান
আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার পর, প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদানের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করুন: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- অনলাইন পেমেন্ট: ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করুন।
- ব্যাংক ড্রাফট: নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক ড্রাফট সংগ্রহ করুন।
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া
ফি প্রদানের পর, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন ফর্মটি নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন। কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করুন:
- আবেদন ফর্মের প্রিন্ট আউট: সঠিকভাবে পূরণ করা আবেদন ফর্মের প্রিন্ট আউট।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের আসল এবং ফটোকপি।
- পেমেন্ট রিসিপ্ট: ফি প্রদানের রিসিপ্ট।
৪. বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ
কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর, আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক ডেটা (ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফটোগ্রাফ) সংগ্রহ করা হবে। এই ধাপটি পাসপোর্ট অফিসে সম্পন্ন করা হয়।
৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ
বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ এবং সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করুন: অনলাইনে পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করুন।
- পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন: পাসপোর্ট ইস্যু হওয়ার পর, নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করুন।
পাসপোর্ট ফি
বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্নলিখিত টেবিলে পাসপোর্ট ফি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল:
পাসপোর্টের ধরন | পৃষ্ঠা সংখ্যা | মেয়াদ | ফি (টাকায়) |
---|---|---|---|
সাধারণ পাসপোর্ট | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | ৩,০০০ |
সাধারণ পাসপোর্ট | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | ৪,০০০ |
জরুরি পাসপোর্ট | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | ৭,০০০ |
জরুরি পাসপোর্ট | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | ৯,০০০ |
পাসপোর্ট করার সময়সীমা
পাসপোর্ট করার সময়সীমা আবেদনকারীর ধরন এবং পাসপোর্টের ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, পাসপোর্ট ইস্যু হতে ১৫ থেকে ২১ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে, জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা কমে ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস হতে পারে।
পাসপোর্ট করার সময় সাধারণ ভুলগুলি
পাসপোর্ট করার সময় অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন। এই ভুলগুলি এড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করুন:
- আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করুন: আবেদন ফর্মে ভুল তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন: সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখুন।
- ফি সঠিকভাবে প্রদান করুন: ফি প্রদানের সময় সঠিক পরিমাণ এবং পদ্ধতি নিশ্চিত করুন।
- বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহে উপস্থিত থাকুন: বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করার সময় আবেদনকারীর উপস্থিতি আবশ্যক।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. পাসপোর্ট করার জন্য বয়স সীমা কত?
পাসপোর্ট করার জন্য কোনো বয়স সীমা নেই। যেকোনো বয়সের নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।
২. পাসপোর্ট করার জন্য কত সময় লাগে?
সাধারণত, পাসপোর্ট ইস্যু হতে ১৫ থেকে ২১ কার্যদিবস সময় লাগে। জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা কমে ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস হতে পারে।
৩. পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কি করতে হবে?
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। পুরাতন পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে।
৪. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করতে হবে?
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে, দ্রুত নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন এবং হারানো পাসপোর্টের রিপোর্ট করুন। নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে থেকেই নবায়নের জন্য আবেদন করা যায়। নবায়নের জন্য প্রক্রিয়াটি প্রায় নতুন পাসপোর্ট করার মতোই:
- অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- পুরাতন পাসপোর্টের কপি সংযুক্ত করুন।
- নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন।
- বায়োমেট্রিক তথ্য আপডেট করুন।
- নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
পাসপোর্ট সংগ্রহ
যখন আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে, তখন আপনি নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করে এটি সংগ্রহ করতে পারবেন: “পাসপোর্ট করার নিয়ম”
- পাসপোর্ট অফিস থেকে SMS বা অনলাইন স্ট্যাটাস চেক করুন।
- নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট অফিসে যান।
- রশিদ বা স্লিপ প্রদান করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত সাধারণ সমস্যাগুলো ও সমাধান
সমস্যা | সম্ভাব্য সমাধান |
আবেদন স্ট্যাটাস দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত | সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। |
তথ্য ভুল এসেছে | সংশোধনের জন্য আবেদন করুন। |
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে | জিডি করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন। |
উপসংহার
বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার নিয়ম তুলনামূলক সহজ হলেও, সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। উপরের ধাপে ধাপে নির্দেশনা মেনে চললে, সহজেই পাসপোর্ট আবেদন করা যাবে। আশা করি এই গাইডটি আপনার পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।